রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:০২ অপরাহ্ন
সাদের হোসেন (বুলু), নবাবগঞ্জ-দোহার প্রতিনিধি:: শান্ত পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠে কোটা আন্দোলনের সময়। সুযোগ বুঝে কিছু নাশকতাকারী হামলা করছে সরকারি স্থাপনায় ভাঙ্গচুর, আগুন দিয়ে অফিস আদালত ও দেশের সম্পদ ক্ষতি করছে। এই ভেবে মনে প্রচুর ভয় জাঁগে কি হবে। মা ও ভাইসহ তিন সদস্যের পরিবার। এমনিতে অভাব যেন পিছু ছাড়ছে না তাঁদের। ভয়কে জয় করে কাজে যায় নির্মাণ শ্রমিক রাকিব গত ১৯ জুলাই সকালে সাভার নর্দা বাস স্ট্যান্ড এলাকায় একটি গ্রীল কারখানায়।
বিকালে বাসায় ফেরার পথে একটি গুলি তাঁর গলা ছিদ্র করে বেরিয়ে যায়। আর বাসায় ফেরা হলো না রাকিবের। এমন কথা বলেন, নিহত রাকিবের মা সুইটি আক্তার। দুচোখ বেয়ে অঝরে পানি পড়ছিলো কথাগুলো বলার সময়। মা সুইটি আক্তার আর কথা বলতে পারলো না। মাটিতে লুটিয়ে বাবা বাবা বলে চিৎকার করছিলেন। এদৃশ্য রাকিবের গ্রামের বাড়ি নবাবগঞ্জের চুড়াইন ইউনিয়নের কামারখোলা গ্রামের বাড়িতে।
স্বজনরা বলেন, রাকিব বিকালে কাজ শেষে বাসায় ফেরার সময় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে চলা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় সময় হঠাৎ একটি গুলি তাঁর গলাভেদ করে বেরিয়ে যায়। এরপর আর বাসায় ফিরে আসতে পারেনি রাকিব। মুহুর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মারা যায়। নিহত রাকিব(২৩) এর গ্রামের বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার চুড়াইন ইউনিয়নের কামারখোলা গ্রামে। রাকিবের মা সুইটি আক্তার। প্রায় ২০ বছর আগে তাঁর স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র চলে যায়। সন্তানদের আঁকড়ে ধরেই জীবন চলছিলো তাঁর। তিন ছেলে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খায় সুইটি। নিরুপায় হয়ে গাজীপুর আশ্রয় নেয়। সেখানে কখনো পোশাক শিল্পে আবার কখনো প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে ছেলেদের ভরণপোষণ করে জীবন চালায় স্বামী পরিত্যক্ত এই গৃহবধু। নিহত রাকিব তাঁর দ্বিতীয় সন্তান। রাকিবের উপার্জনেই সংসার চলতো সুইটির আক্তারের। ছেলের অনুরোধেই কয়েক বছর আগে সুইটি চাকুরী ছেড়ে দেন। রাকিবই ছিলো তার সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম।
১৯ জুলাই রাকিবের গলায় গুলিবিদ্ধ হলে সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরে সহকর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁর লাশ ফেলে রাখা হয়। পরের দিন ২০ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ক্যান্টনমেন্ট থানা সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়না তদন্ত করে। এর ২দিন পর ২২ জুলাই পরিবারের কাছে লাশ হস্তানান্তর করা হয়। এসময় পুলিশ তাঁদেরকে লাশ নিয়ে দ্রুত সরে যেতে বলে। ৩০ মিনিটের মধ্যে লাশ দাফনের জন্য বলা হয়। নিরুপায় হয়ে লাশ আর নবাবগঞ্জ আনতে পারেনি। পরে গাজীপুরের সখিপুরেই তাড়াহুড়া করে লাশ দাফন করা হয়।
নিহতের ছোট ভাই মো. সাকিব বলেন, আমাদের কেউ নাই। উপরে আল্লাহ ও আমার মা ই ভরসা। আমার ভাইকে যাঁরা গুলি করেছে তাঁদের বিচার চাই। আমার ভাই তো কোনো অপরাধ করেনি।